এই ইমেজটি একটি আবেগপূর্ণ গল্পের চিত্র


 এই ইমেজটি একটি আবেগপূর্ণ গল্পের চিত্র তুলে ধরে, যেখানে একজন ছোট ছেলে নদীর পাড়ে বসে আছে। তার মুখে বিষণ্ণতার ছাপ, এবং পাশে একটি ছেঁড়া পারিবারিক ছবি ও মাছ ধরার জাল। সূর্যাস্তের নরম আলো এবং নদীর প্রতিচ্ছবি দৃশ্যটিকে আরও আবেগময় করে তুলেছে।


গল্প: হারানো দিনের স্মৃতি :

রোজ বিকেলে ছোট্ট শামীম নদীর ধারে এসে বসে। আজও সূর্য অস্ত যাচ্ছে, আকাশ লাল রঙে সেজেছে। নদীর জলে সূর্যের প্রতিফলন যেন এক অন্য রকম রূপকথা। কিন্তু শামীমের চোখে সেই রূপকথা নেই, আছে শুধুই বিষণ্ণতা।

তার ছোট্ট হাতে ধরা একটি ছেঁড়া পারিবারিক ছবি। ছবিতে তার মা, বাবা আর বোনের হাসিমুখ। একসময় এই ছবির মানুষগুলোই ছিল তার পুরো পৃথিবী। কিন্তু কয়েক বছর আগের সেই ভয়াবহ বন্যা সবকিছু কেড়ে নিল। শামীম আর তার মা কোনোভাবে বাঁচতে পেরেছিল, কিন্তু বাবা আর বোন নদীর জলে হারিয়ে গেল চিরতরে। সেই থেকে নদী শামীমের কাছে আনন্দের নয়, বরং বেদনার প্রতীক।

ছোট্ট মাছ ধরার জালটি তার বাবার স্মৃতি। বাবা তাকে বলতেন, "তুমি বড় হলে আমার মতো ভালো মৎস্যজীবী হবে।" শামীম সেই দিনগুলো ফিরে পেতে চায়, যখন তাদের জীবন ছিল আনন্দে ভরা। কিন্তু সে জানে, সেই দিন আর কোনোদিন ফিরবে না।

শামীম ছবি ছুঁয়ে বলে, "বাবা, তুমি শুনতে পাচ্ছো? আমি বড় হয়ে তোমার স্বপ্ন পূরণ করব। আমি তোমার মতো একজন মৎস্যজীবী হব, যেন তোমার গল্প সবাই মনে রাখে।"

সূর্য ডুবে গেলে শামীম উঠে দাঁড়ায়। নদীর পাড় থেকে সে তার জাল তুলে নেয়। আজ সে নদীতে মাছ ধরতে যাবে। বাবার স্মৃতি আর তার ছোট্ট স্বপ্ন নিয়ে শামীমের জীবন চলতে থাকবে।

তার মনে একটি অদ্ভুত আশা জাগে—যদি একদিন এই নদী তার বাবার আর বোনের খবর এনে দেয়! কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত শামীমের লড়াই চলবে, স্বপ্নের জন্য, পরিবারের জন্য।

শেষ

*****
&&&

গল্প: হারানো দিনের স্মৃতি:

নদীর ধারে বসে শামীম চুপচাপ জল দেখে। নদীর ঢেউগুলো যেন তার বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকা আবেগের প্রতিচ্ছবি। প্রতিদিনের মতো আজও সে তার বাবার পুরোনো মাছ ধরার জাল আর ছেঁড়া পারিবারিক ছবিটি নিয়ে এখানে এসেছে। সূর্যটা ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছে। সোনালি আলো নদীর জলে প্রতিফলিত হয়ে মায়াবী এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবে শামীমের চোখে এই সৌন্দর্য ধরা পড়ে না। তার চোখে শুধু দুঃখ আর শূন্যতার ছায়া।

শামীমের বয়স মাত্র দশ। এই বয়সেই জীবন তাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। তার পরিবার ছিল অতি সাধারণ, কিন্তু খুবই সুখী। বাবা একজন মৎস্যজীবী ছিলেন। মা গৃহিণী, আর ছোট বোন লাইলি ছিল তাদের হাসিখুশি পরিবারের প্রাণ। শামীমের সবচেয়ে বড় আনন্দ ছিল বাবার সঙ্গে নদীতে গিয়ে মাছ ধরা। বাবা বলতেন, “তুই আমার মতো হবি, দেখবি, তোর হাতেই একদিন বড় বড় মাছ উঠবে।”

কিন্তু সেই দিনগুলো যেন বহু দূরের স্বপ্নের মতো মনে হয়। দুই বছর আগে, বর্ষার শেষে নদীতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। সেই সময় তাদের ছোট্ট গ্রামটি ভেসে যায়। ঘরবাড়ি হারিয়ে বহু পরিবার এলোমেলো হয়ে পড়ে। শামীমের পরিবারও সেই দুর্যোগের শিকার হয়। এক রাতে নদীর পানি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। বাবার হাত ধরে নদীর স্রোত থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল শামীম। কিন্তু একটা মুহূর্তে বাবা আর ছোট বোন লাইলি সেই প্রবল স্রোতে ভেসে যান। শামীম আর তার মা কোনোভাবে বেঁচে যায়, কিন্তু তাদের পরিবারের বাকি দুই সদস্য চিরতরে হারিয়ে যায়।

আজও শামীম সেই রাতের কথা ভুলতে পারে না। প্রতিদিন তার মনে হয়, যদি বাবার হাত আরও শক্ত করে ধরে রাখতে পারত, যদি কোনোভাবে লাইলিকে বাঁচাতে পারত! এই নদী তার শৈশবের আনন্দের সঙ্গী ছিল, কিন্তু এখন এটি তার কাছে একটি দুঃস্বপ্নের নাম।

ছবির দিকে তাকিয়ে শামীম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ছবিটা পুরোনো হয়ে গেছে, কিছু জায়গা ছিঁড়ে গেছে। তবু এই ছবিটাই তার একমাত্র সান্ত্বনা। এখানে তার বাবা-মায়ের হাসিমুখ আর লাইলির উচ্ছল চেহারা বন্দী। সে ছবিটা বুকে চেপে ধরে বলে, “বাবা, আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করব। আমি বড় হয়ে তোমার মতো একজন মৎস্যজীবী হব। আমি তোমার গল্প সবার কাছে তুলে ধরব।”

শামীমের মা এই কষ্টের জীবনেও তাকে বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিনি কোনোমতে সংসার চালান। কিন্তু শামীম জানে, মা একা আর কতদিন পারবেন? তাই সে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিতে চায়। বাবার পুরোনো জালটি নিয়ে সে মাছ ধরার চেষ্টা শুরু করেছে। যদিও এখনো খুব বেশি মাছ ধরতে পারে না, কিন্তু তার মনে আছে আশা।

একদিন সন্ধ্যায় শামীম নদীর ধারে বসে ছিল। হঠাৎ একজন বৃদ্ধ জেলে তার পাশে এসে বসেন। তিনি শামীমের হাতের জাল দেখে বলেন, “এটা তো অনেক পুরোনো জাল। এর মালিক কে ছিল?” শামীম সেই বৃদ্ধকে তার বাবার গল্পটি শোনায়। বৃদ্ধ চুপচাপ শুনে বলেন, “তোর বাবাকে আমি চিনি। সে খুব ভালো মানুষ ছিল। তোরও তার মতো হতে হবে। সাহস হারাস না, নদী তো জীবন দেয়। তুই যদি মন দিয়ে চেষ্টা করিস, নদী তোকেও জীবন দেবে।”

বৃদ্ধের কথা শামীমের মনে সাহস জোগায়। সে জানে, নদীর প্রতি তার রাগ এবং বেদনা থাকলেও, এই নদীই তার বেঁচে থাকার একমাত্র আশ্রয়। পরদিন ভোরবেলায় সে আবার নদীতে যায়। সে নিজেকে প্রতিজ্ঞা করে, যতই কষ্ট হোক, সে তার স্বপ্ন পূরণ করবে।

শামীমের গল্পটা শুধু একজন শিশুর সংগ্রামের গল্প নয়, এটি আশা, সাহস আর ভালোবাসার গল্প। হারানোর বেদনা থেকে কীভাবে নতুন করে বাঁচা যায়, কীভাবে জীবনকে নতুন করে শুরু করা যায়, সেটাই শামীম তার জীবনের মাধ্যমে দেখাচ্ছে। নদী তার কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু সেই নদীর মধ্যেই সে নতুন জীবনের সন্ধান করেন। 

শেষ।

Post a Comment

Previous Post Next Post